Chapter-7 বাংলায় শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার সপ্তম অধ্যায় | Seventh Chapter of Srimad Bhagavad Gita in Bengali

Chapter-7 বাংলায় শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার সপ্তম অধ্যায় | Seventh Chapter of Srimad Bhagavad Gita in Bengali


সপ্তম অধ্যায়


জ্ঞান-বিজ্ঞানযােগ


শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন

আমাগত চিত্ত হয়ে যােগে দিলে মন।

পাইবে আমারে পার্থ, বলিতেছি শােন।।১

এই জ্ঞানে সবিজ্ঞান বলিব তােমায়।

যাহা জেনে জানিবার রবে না ধরায় ৷ ৷২

সহস্র নরের মধ্যে কেহ সিদ্ধি চায় ।

সিদ্ধ মধ্যে কদাচিৎ কেহ মােরে পায় ৷ ৷৩

সরলার্থঃ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন— হে অর্জুন, আমাতে মনপ্রাণ সমৰ্পণ করিয়া যােগ অভ্যাস করিলে তুমি আমাকে পাইবে। ১ এই সবিজ্ঞান জ্ঞান আমি তােমাকে বলিব। ইহা জানিলে এই পৃথিবীতে আর কিছু জানিবার বাকী থাকে না। ২ এক হাজার লােকের মধ্যে কদাচিৎ কেহ আমাকে জানিতে চায় । আর যাহারা আমাকে জানিতে চায়। তাহাদের কদাচিৎ কেহ আমাকে পাইয়া থাকে। ৩


ভূমি জল অগ্নি বায়ু নভঃ বুদ্ধি আর ।

মন অহং এই অষ্ট প্রকৃতি আমার।।৪

প্রকৃতি অপরা পরা জেনাে দু’প্রকার।

জীবভূতা এরা পার্থ রক্ষিছে সংসার।।৫

এ দুই প্রকৃতি হতে সবর্ভূত হয়।

আমি হই এ বিশ্বের সৃজন প্রলয়।।৬

আমা হতে শ্রেষ্ঠ পার্থ কিছু নাহি আর।

আমাতেই সব গাঁথা যথা সূত্রে মণিহার।।৭

সরলার্থঃ ভূমি, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, বুদ্ধি, মন, অহংকার এই আটটি আমার প্রকৃতি। ৪ হে অর্জুন, আমার প্রকৃতি দুই প্রকার—পরা ও অপরা। ইহারাই সংসার রক্ষা করিতেছে। ৫ আমার এই দুই প্রকারের প্রকৃতি হইতেই সমস্ত ভূতের উৎপত্তি। আর এই বিশ্বের সৃষ্টি ও সংহারের কর্তা আমি। ৬ হে অর্জুন আমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কিছু নাই। সূতদ্বারা যেমন মণির হার গাঁথা থাকে এইবিশ্বও সেইরূপ আমাতে গাঁথা আছে। ৭


চন্দ্র সূর্যে প্রভা আমি, জল মধ্যে রস।

বেদে ওম্ নভে শব্দ নরের পৌরুষ ৷ ৷ ৮

জীবের জীবন পূত গন্ধ পৃথিবীর ।

আগুনের তেজঃ আমি তপঃ তপস্বীর।।৯

সনাতন আমি পার্থ প্রাণীদের বীজ।

বুদ্ধিমানে বুদ্ধি আমি তেজস্বীর তেজ ৷ ৷১০

কাম রাগশূন্য বল আমি বলবানে।

ধর্মযুক্ত কাম আমি পার্থ প্রাণিগণে।।১১

সরলার্থঃ আমি চন্দ্র সূর্যের কিরণ, জলের রস, বেদের ওম্ (প্রণব); আকাশে শব্দ ও মানুষের পৌরুষ। ৮ আমি জীবের জীবন, পৃথিবীর পূতিগন্ধ, আগুনের তেজ এবং তপস্বীর তপস্যা। ৯ হে অর্জুন, আমি সনাতন । আমি ভূতগণের বীজ, বুদ্ধিমানের বুদ্ধি এবং তেজস্বীর তেজ। ১০ আমি বলবানের বল, প্রাণিগণের কাম (বা অভিলাষ)।১১


সত্ত্ব রজঃ তমঃ ভাব জন্মে আমা হতে।

আমি কিন্তু নাহি তাহে, তাহারা আমাতে।।১২

এ ত্রিগুণে আমি মুগ্ধ করেছি সংসার।

কেহ তাে জানে না আমি নিত্য নির্বিকার।। ১৩

গুণময়ী এ মায়ারে ছিন্ন করা দায়।

আমার আশ্রিত হয়ে তবে ছাড়া যায়।।১৪

জ্ঞান যার অপহৃত হয়েছে মায়ায় ।

অসূর-ভাবহেতু পাপী ভজে না আমায়।।১৫

সরলার্থঃ সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিনটি গুণ আমা হইতে জন্মে । উহারা আমার অধীন, কিন্তু আমি উহাদের অধীন নই। ১২ এই তিনটি গুণ দিয়া আমি সংসারকে মুগ্ধ করিয়া রাখিয়াছি । অথচ নিত্য ও নির্বিকার আমাকে কেহই জানে না। ১৩ আমার আশ্রিত না হইলে ত্রিগুণময়ী মায়াকে কেহ ত্যাগ করিতে পারে না। ১৪ মায়া দ্বারা জ্ঞান আচ্ছন্ন সেই ব্যক্তি অসুরভাব প্রাপ্ত হয়। সে আমার ভজনা করে না। ১৫


অর্থার্থী জিজ্ঞাসু আর্ত আর জ্ঞানী জন।

মােরে ভজে এই চারি পূণ্যবান।।১৬

তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভক্ত নিত্যযুক্ত জ্ঞানী।

আমি তার সে আমার প্রিয় এই জানি।।১৭

সকলই উদার তারা জ্ঞানী প্রাণ মাের।

করেছে আশ্রয় মোরে আমি গতি ওর ৷ ৷১৮

বহুজন্ম পরে জ্ঞানী বাসুদেব জ্ঞানে।

ভজে মােরে, সেই জ্ঞানী দুর্লভ ভুবনে।।১৯

সরলার্থঃ  অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু, আর্ত, জ্ঞানী-এই চারি পূণ্যবান ব্যক্তি আমার ভজনা করে।১৬ এই চারিজনের মধ্যে নিত্যযুক্ত জ্ঞানী ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ- ভক্ত। আমি তাহার প্রিয় ও তিনিও আমার প্রিয়। ১৭ নিত্যযুক্ত জ্ঞানী উদার। তিনি আমাকে আশ্রয় করিয়া থাকেন। আমিই তাঁহার গতি। ১৮ নিত্যযুক্ত জ্ঞানী বহু জন্ম পরে বাসুদেব জ্ঞানে আমাকে ভজনা করে । ঈদৃশ জ্ঞানী ব্যক্তি পৃথিবীতে দুর্লভ। ১৯


নানা কামনায় যার জ্ঞান নাশ হয়।

নানা মনে অন্য দেবে সে জন পূজয়।।২০

যে ভক্ত পুজিতে চায় যেই দেবতারে।

পূজায় অচলা ভক্তি আমি দেই তারে।।২১

ভক্তিতে পূজিয়া দেবে আমার বিধানে।

লাভ করে ইষ্ট ফল সেই ভক্ত জনে।।২২

দেবযাজী পেয়ে থাকে ক্ষণস্থায়ী ফল ।

মাের ভক্ত পায় নিত্য আমাকে কেবল ৷ ৷২৩

সরলার্থঃ নানা কামনায় যাহার জ্ঞান নাশ হয় সেই ব্যক্তি নানাভাবে অন্যদেবতার পূজা করে। ২০ যে ভক্ত অন্য যেই দেবতাকে পূজা করিতে চায় সেই দেবতাকে পূজা করিবার অচলা ভক্তি আমিই তাহাকে দিয়া থাকি। ২১ সেই ভক্ত ভক্তির সহিত সেই দেবতাকে পূজিয়াই ইষ্টফল লাভ করে। ২২ অন্য দেবতার পূজা করিয়া ভক্ত যে ইষ্টফল লাভ করে তাহা ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু আমার ভক্ত আমাকে চির দিনের জন্য লাভ করে। ২৩


উত্তম অব্যয় আমি জানে না অজ্ঞান

ব্যক্ত ভাবে তাই করে আমার পূজন।।২৪

অজ ও অব্যয় আমি আদি অন্তহীন।

জানিতে পারে না মােরে মায়ামুগ্ধ জন।।২৫

ভূত ভবিষ্যৎ পার্থ আর বর্তমানে।

আমি জানি ভূতগণে মােরে নাহি জানে।।২৬

সৃষ্টি হতে ওহে পার্থ জীবন সমুদয় ।

ইচ্ছা-দ্বেষে জাত দ্বন্দ্বে বিমােহিত রয়।।২৭

সরলার্থঃ অজ্ঞান ব্যক্তি জানে না যে, আমি অব্যয় ও উত্তম। সেইজন্য সে ব্যক্তভাবে আমার উপাসনা করে। ২৪ আমি অজ অব্যয় এবং আদি-অন্তহীন। মায়ামুগ্ধ ব্যক্তি তাহা জানিতে পারে না । ২৫ হে অর্জুন, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভূতগণকে আমি জানি। কিন্তু আমাকে কেহই জানে না। ২৬ হে অর্জুন, সৃষ্টির পর হইতে মােহ জন্মে। ফলে তাহারা মায়ায় আবদ্ধ হইয়া পড়ে। ২৭


কিন্তু পাপমুক্ত সদা পূণ্যকারীগণ।

মােহ মুক্ত হয়ে করে আমার ভজন।।২৮

মুক্তি তরে যেবা জন আশ্রয়ে আমায়।

অধ্যাত্ম ব্রহ্ম কর্মাদি সে জন জানয়।।২৯

অধিভূত অধিদৈব অধিযজ্ঞ মােরে।

যে জানে সে অন্তকালে আমাকেই স্মরে।।৩০

সরলার্থঃ কিন্তু নিষ্পাপ পূণ্যবান ব্যক্তিগণ মােহযুক্ত হইয়া আমার ভজনা করিয়া থাকে। ২৮ যে ব্যক্তি মুক্তিলাভের জন্য আশ্রিত হয়, সে ব্যক্তি অধ্যাত্ম ব্রহ্মকর্ম প্রভৃতি সবই জানিতে পারে। ২৯ যে ব্যক্তি আমাকে অধিভূত, অধিদৈব ও অধিযজ্ঞ বলিয়া জানে সে ব্যক্তি অন্তকালে আমাকেই স্মরণ করে। ৩০


শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার সপ্তম অধ্যায়ের সার-সংক্ষেপ

সপ্তম অধ্যায়ে ভগবানের স্বরূপ বর্ণনা করা হইয়াছে। ভগবানের দুইটি প্রকৃতি—অপরা ও পরা। এই প্রকৃতি জীবজগৎকে ধারণ করিয়া আছে । প্রকৃতি আমার (ঈশ্বরের) মায়া । ইহা আমা হইতে সৃষ্ট। ইহা আমার অধীন, কিন্তু আমি ইহার অধীন নই। মায়ামুগ্ধ জীব আমাকে জানিতে পারে না । আমাকে না জানিয়া অন্য দেবতাকে জানিতে চায় এবং অন্য দেবতার পূজা করিয়া ইষ্টফল লাভ করে। সেই ইষ্টফল কিন্তু ক্ষণস্থায়ী। আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী– এই চারি প্রকার ভক্তই প্রকৃতির প্রভাবে আমাকে জানিতে চান। ইহাদের মধ্যে জ্ঞানী ভক্তই শ্রেষ্ঠ। সংসারে অধ্যাত্ম, অধিভূত, অধিদৈব, অধিযজ্ঞ -সবই আমি । ইহাই আমার স্বরূপ। জ্ঞানী ভক্ত আত্মজ্ঞানের বলে আমার স্বরূপ জানিতে পারেন । এই কারণেই জ্ঞানীভক্ত আমার প্রিয়, আমিও তাঁহার প্রিয় ।

ইতি জ্ঞান-বিজ্ঞান-যােগ নামক সপ্তম অধ্যায়।


আরো পড়ুন:

মঙ্গলাচরণ প্রথম অধ্যায় | দ্বিতীয় অধ্যায় | তৃতীয় অধ্যায় | চতুর্থ অধ্যায় | পঞ্চম অধ্যায় | ষষ্ঠ অধ্যায় | অষ্টম অধ্যায় | নবম অধ্যায় | দশম অধ্যায় | একাদশ অধ্যায় | দ্বাদশ অধ্যায় | ত্রয়োদশ অধ্যায় | চতুর্দশ অধ্যায় | পঞ্চদশ অধ্যায় | ষােড়শ অধ্যায় | সপ্তদশ অধ্যায় | অষ্টাদশ অধ্যায় | সংক্ষিপ্ত-মাহাত্ম্যম | সম্পূর্ণ-মাহাত্ম্যম | ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ