Chapter-11 বাংলায় শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার একাদশ অধ্যায় | Eleventh Chapter of Srimad Bhagavad Gita in Bengali

Chapter-11 বাংলায় শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার একাদশ অধ্যায় | Eleventh Chapter of Srimad Bhagavad Gita in Bengali


একাদশ অধ্যায়


বিশ্বরূপ-দর্শনযােগ


অর্জুন কহিলেন

শুনিয়া অধ্যাত্ম তত্ত্ব তােমার কৃপায় ।

দূর হলাে মােহ মাের ওহে দয়াময়।।১

কহিলে কেশব তুমি কথা সৃষ্টি-লয়।

বিস্তরে শুনেছি তব মাহাত্ম্য অব্যয়।।২

স্বরূপ কহিলে যাহা সত্য বটে সব।

ইচ্ছা হয় ঐশী মূর্তি দেখি আমি তব।।৩

সরলার্থঃ অর্জুন বলিলেন— হে কৃষ্ণ, তােমার কৃপায় অধ্যাত্মতত্ত্ব শুনিয়া আমার মােহ দূর হইল ।১ তুমি সৃষ্টি ও লয়ের কথা বলিয়াছ। তােমার অব্যয় মাহাত্ম্যও সবিস্তারে শুনিয়াছি ।২ তুমি তােমার স্বরূপ যাহা বলিলে তাহা সবই সত্য । তােমার ঐশী মূর্তি দেখিবার জন্য আমার খুব ইচ্ছা হইতেছে ।৩


মাের দেখা যােগ্য যদি মনে কর প্রভাে।

দেখায়ে কৃতার্থ কর মােরে তুমি বিভাে ৷ ৷৪

শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন

দেখ পার্থ নানা বর্ণ বিবিধ প্রকার।

শত শত সহস্র বা এরূপ আমার।।৫

হের অশ্বিনীদ্বয় পার্থ বায়ু আদিত্যাদি।

দেখ নাই পূর্বে যাহা বসুরুদ্র আদি।।৬

সরলার্থঃ হে দয়াময়, তুমি যদি আমাকে তােমার ঐশী মূর্তি দেখিবার উপযুক্ত মনে কর, তবে দয়া করিয়া আমাকে তাহা দেখাও। ৪ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন-হে অর্জুন, আমার শত সহস্র বর্ণ দেখ ।৫ আমার দেহে অশ্বিনীকুমারদ্বয়, বায়ুগণ, আদিত্যগণ বসুগণ ও রুদ্রগণকে দেখ ।৬


চেয়ে দেখ মাের দেহে জগৎ অশেষ।

আরাে যাহা ইচ্ছা হয় দেখ গুড়াকেশ।।৭

চর্ম চোখে মােরে দেখা সম্ভব না হয়।

দিতেছি তােমারে তাই চক্ষু জ্ঞানময়।।৮

সঞ্জয় কহিলেন

হে রাজন! কৃষ্ণ তবে কহিয়া এরূপ।

দেখাইলা অর্জুনেরে ঐশ্বরিক রূপ ৷ ৷৯

সরলার্থঃ নিখিল জগৎ আমার মধ্যেই বিদ্যমান। তুমি আমার মধ্যে আরও যাহা দেখিতে চাও চাহিয়া দেখ ।৭ চর্ম-চক্ষুতে আমাকে দেখা সম্ভব নয়। তাই তােমাকে জ্ঞান চক্ষু দান করিতেছি।৮ সঞ্জয় বলিলেন, হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র!  এই কথা বলিয়া শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে নিজের দিব্যরূপ দেখাইলেন ।৯


বহু মুখ বহু নেত্র অদ্ভুত দর্শন।

দিব্য অস্ত্রশস্ত্র কত দিব্য আভরণ ৷ ৷১০

সুগন্ধে চর্চিত দিব্যমাল্য বস্ত্রধারী ।

সর্বাশ্চর্যময় দেব অনন্ত মুরারি।।১১

সহস্র তপন যদি উঠে আকাশেতে।

তবু নহে তুলনীয় এ রূপের সাথে।।১২

দেখিলা তখন পার্থ দেবদেব-দেহে।

নানা ভাগে ভাঙ্গা বিশ্ব একত্রিত রহে ৷ ।১৩

সরলার্থঃ অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের বহুমুখ, বহুচক্ষু এবং দিব্য অস্ত্রশস্ত্র ও দিব্য-অলংকারে শােভিত তাঁহার অদ্ভুত মূর্তি দেখিলেন।১০ অর্জুন দেখিলেন— শ্রীকৃষ্ণ দিব্য বস্ত্রমাল্যধারী এবং সুগন্ধে চর্চিত, সর্বাশ্চর্যময় ও অনন্ত ।১১ এক হাজার সূর্য যদি আকাশে উদিত হয় তবে শ্রীকৃষ্ণের রূপের তুলনায় হাজার সূর্যের রূপ কিছু নয়।১২ অর্জুন নানাভাগে বিভক্ত বিশ্বকে শ্রীকৃষ্ণের দেহে একত্রিত দেখিতে পাইলেন।১৩


মুগ্ধ রােমাঞ্চিত হয়ে পাণ্ডুর তনয়।

শ্রীকৃষ্ণকে প্রণমিয়া করজোড়ে কয়।।১৪

অর্জুন কহিলেন

দেখি দেব তব দেহে আমি দেবগণে।

ঋষি সর্প সর্বভূত ব্রহ্মা পদ্মাসনে।।১৫

অনন্ত উদর-মুখ-নেত্র-বাহু সব।

আদি-অন্ত মধ্যহীন বিশ্বরূপ তব।।১৬

সরলার্থঃ এই অদ্ভুত রূপ দেখিয়া অর্জুন রােমাঞ্চিত হইলেন। শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিয়া করজোড়ে বলিলেন। ১৪ অর্জুন বলিলেন- হে দেব, আমি তােমার মধ্যে দেবগণ, ঋষিগণ, সর্পগণ, সর্বভূত ও পদ্মাসন ব্রহ্মাকে দেখিতে পাইতেছি ।১৫ আমি তােমার অনন্ত উদর, অনন্ত নেত্র ও অনন্ত বাহু দেখিতেছি। আমি তােমার বিশ্বরূপ দেখিতেছি। তােমার এই রূপ আদিহীন, মধ্যহীন ও অনন্ত।১৬


চূড়া গদা-চক্রধর সর্বত উজ্জ্বল।

নিরীক্ষণ যোগ্য নও তেজে সূর্যানল।।১৭

সনাতন তুমি দেব অক্ষর অব্যয়।

ধর্মরক্ষাকারী ব্ৰহ্ম জগৎ আশ্রয়।।১৮

বহু বাহু, বহু-নেত্র, রবি-শশী আঁখি।

প্রদীপ্ত-অনল-তেজ বিশ্ব তাপে দেখি ৷ ৷১৯

সরলার্থঃ  তুমি চূড়া, গদা ও চক্রধারী। সর্বদিকেই তুমি উজ্জ্বল । তেজে তুমি সূর্য ও অগ্নির তুল্য। তােমাকে নিরীক্ষণ করা সম্ভব নয়।১৭ তুমি সনাতন। তুমি অব্যয় অক্ষর। তুমি সর্ব-ধর্ম রক্ষাকারী ও জগতের আশ্রয় ।১৮ তােমার অনন্ত বাহু অনন্ত নেত্র। তােমার দুই চোখে সূর্য ও চন্দ্রের জ্যোতি। তােমার আগুনের মত উজ্জ্বল তেজে নিখিল জগৎ উত্তপ্ত হইতেছে ।১৯


একাই ব্যাপিয়া আছ তুমি সব দিকে।

ত্রিলােকে হয়েছে ভীত উগ্র রূপ দেখে ।।২০

ভয়ার্ত ত্রিলােকবাসী আর দেবগণ।

ঋষি সিদ্ধ স্বস্তিবাক্যে করেন স্তবন ৷ ৷২১

বসুরুদ্র অশ্বিনীপুত্র সাধ্য সিদ্ধ যত ।

তব রূপ দেখি তারা মুগ্ধ হয় কত ৷ ৷২২

বহু মুখ-নেত্র, বহু ঊরু, বহু চোখ।

দেখিয়া হইনু ভীত আমি ও ত্রিলােক।।২৩

সরলার্থঃ তুমি একাই সমস্ত বিশ্ব ব্যাপিয়া আছ। তােমার উগ্ররূপ দেখিয়া ত্রিলােক ভীত হইতেছে।২০ ত্রিলােকবাসী ও দেবগণ ভয়যুক্ত হইতেছেন। ঋষিগণ ও সিদ্ধগণ তােমার স্তব করিতেছেন ।২১ বসুগণ, রুদ্রগণ, সিদ্ধগণ সকলেই তােমার রূপ দেখিয়া অতিশয় মুগ্ধ হইয়াছে ।২২ তােমার বহুমুখ, বহুচোখ, বহু বাহু ঊরু দেখিয়া ত্রিলােক ও আমি ভীত হইয়াছি ।২৩


বিশ্বব্যাপী তেজোদীপ্ত নানা বর্ণধর।

নেহারিয়া ভয়াকুল আমার অন্তর।।২৪

কালানল সম মুখ করাল দর্শন।

দেখিয়া হইনু কৃষ্ণ ভ্রান্ত সুখহীন।।২৫

ধৃতরাষ্ট্র পুত্র সহ আর রাজা যত ।

ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ সহ আমাদেরাে কত ৷ ৷২৬

প্রবেশিছে তব মুখে হইয়া অধীর।

চূর্ণমুন্ড কেহ লগ্ন দন্তে ভয়ংকর।।২৭

সরলার্থঃ তােমার নানাবর্ণযুক্ত তেজোদীপ্ত বিশ্বব্যাপী রূপ দেখিয়া আমার হৃদয়ে ভয় হইতেছে। ২৪ হে কৃষ্ণ, কালাগ্নিতুল্য তােমার করাল বদন ও দাঁত দেখিয়া আমি ভ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি । আমার মনে বিন্দুমাত্র সুখও নাই।২৫ ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগণ, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, রাজগণ এবং আমাদের পক্ষেরও কত বীর দেখিতে পাইতেছি। ২৬ তাঁহারা অধীরভাবে তােমার মুখে প্রবেশ করিতেছেন। তাঁহাদের কাহারও মাথা চুর্ণবিচূর্ণ হইয়াছে, কেহবা তােমার ভয়ংকর দাঁতে আটকা পড়িয়া আছেন। ২৭


নদীর প্রবাহ যথা সাগরেতে ধায়।

তেমনি বীরেরা সব তব মুখে যায়।।২৮

পতঙ্গ অনলে পশি জীবন হারায়।

মৃত্যু তরে সব বীর তব মুখে ধায়।।২৯

জলন্ত বদনে সবে করিছ ভক্ষণ ।

ব্যাপ্ত করি সর্ববিশ্ব করিছ দহন।।৩০

কে তুমি হে উগ্ররূপী বল তা আমায়।

তুষ্ট হয়ে কহ দেব প্রণাম তােমায়।।৩১

সরলার্থঃ নদীর স্রোত যেমন সাগরে প্রবাহিত হয় এইসব বীরগণও সেইরূপ তােমার মুখে প্রবেশ করিতেছে।২৮ পতঙ্গ আগুনে প্রবেশ করিয়া মারা যায়। এই সব বীরগণও তেমনি মৃত্যুর জন্যই তােমার মুখে প্রবেশ করিতেছে।২৯ তুমি জ্বলন্ত বদনে সকলকে ভক্ষণ করিতেছ এবং সমস্ত বিশ্বকে ব্যাপ্ত করিয়া দগ্ধ করিতেছে। ৩০ হে উগ্ররূপী, তুমি কে? হে দেব, তুমি দয়া করিয়া তােমার পরিচয় দাও। আমি তােমাকে প্রণাম করিতেছি ।৩১


শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন

লােকক্ষয়কারী কাল ভয়ঙ্কর আমি।

মরিবে শক্ররা যদি না-ও মার তুমি।।৩২

উঠ পার্থ লভ যশ মেরেছি যে আমি।

কর যুদ্ধ উপলক্ষ হও মাত্র তুমি।।৩৩

ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ কৃপ জয়দ্রথ সবে।

আমার নিহত তারা যুদ্ধ কর তবে।।৩৪

সরলার্থঃ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন- হে অর্জুন, আমি লােকক্ষয়কারী ভয়ংকর কাল। তুমি তােমার শত্রুগণকে না মারিলেও তাঁহারা মারা যাইবে ।৩২ হে অর্জুন, উঠ। যুদ্ধ কর। যশ লাভ কর। আমি সকলকে মারিয়া রাখিয়াছি। তুমি উপলক্ষমাত্র হও। ৩৩ ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, কৃপ, জয়দ্রথ-সকলকেই আমি মারিয়া রাখিয়াছি। অতএব তুমি যুদ্ধ কর ।৩৪


সঞ্জয় কহিলেন

কৃষ্ণ বাক্য শুনি ভীত অর্জুন তখন।

প্রণমিয়া করজোড়ে কহিলা বচন।।৩৫

অর্জুন কহিলেন

বিশ্ব তুষ্ট হৃষিকেশ গাহি তব নাম ।

ধায় রক্ষ করে সিদ্ধ তােমায় প্রণাম।।৩৬

অনাদি অনন্ত তুমি ব্ৰহ্ম বিশ্বময়।

ব্ৰহ্মপূর্ব তুমি জ্ঞাতা জ্ঞাতব্য বিষয়।।৩৭

সরলার্থঃ সঞ্জয় বলিলেন শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনিয়া ভীত অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করিয়া করজোড়ে বলিলেন।৩৫ অর্জুন বলিলেন- হে কৃষ্ণ তােমার নাম গান করিয়া জগদ্বাসী পরিতুষ্ট। রাক্ষসগণ তােমার নামে দূরে পলায়ন করে। সিদ্ধগণ তােমায় প্রণাম করে ।৩৬ তুমি অনাদি অনন্ত ব্ৰহ্ম । তুমি বিশ্বময়। তুমি ব্রহ্মারও পূর্ববর্তী। তুমি জ্ঞাতা তুমিই জ্ঞাতব্য বিষয়। ৩৭


আদিদেব তুমি প্রভু পুরুষ প্রধান।

তোমা মধ্যে বিরাজিছে এই বিশ্বমান।।৩৮

প্রজাপতি বরুণ ও প্রপিতামহাদি।

সব তুমি নমি তােমা হে দেব অনাদি।।৩৯

অগ্রে পৃষ্ঠে সবদিকে প্রণামি তােমায়।

অন্তহীন তুমি সর্ব প্রভু দয়াময়।।৪০

সরলার্থঃ হে প্রভু, তুমি আদিদেব। তুমি প্রধান পুরুষ, সমগ্র বিশ্ব তােমার মধ্যে বিরাজমান ।৩৮ তুমি ব্ৰহ্মা। তুমি বরুণ, প্রপিতামহ প্রভৃতি সব তুমি । হে অনাদি দেব, আমি তােমাকে নমস্কার করি ।৩৯ আমি সামনে, পিছনে ও সবদিকে তােমাকে প্রণাম করিতেছি। হে দয়াময় তুমি অনন্ত। তুমি সকলের প্রভু ।৪০


কহিয়া যাদব কৃষ্ণ সখা বার বার।

অজান্তে করেছি কত অবজ্ঞা তােমায়।।৪১

শয়ন ভােজন কিংবা বিবিধ সময়।

দয়াময় ক্ষম মােরে এ দোষ নিচয়।।৪২

বিশ্বপিতা গুরুশ্রেষ্ঠ পূজ্য চরাচরে।

তােমার তুলনা কভু মিলে না সংসারে।।৪৩

পিতা-পুত্রে মিত্র মিত্রে প্রিয় ও প্রিয়ারে।

সহে যথা তুমি তথা সহিও আমারে।।৪৪

সরলার্থঃ না জানিয়া বার বার “হে কৃষ্ণ, হে যাদব, হে সখা”-এইরূপ বলিয়া তােমাকে কতই অবজ্ঞা করিয়াছি। ৪১ আহারের সময়, ঘুমের সময় এবং আরও অনেক সময় আমি তােমাকে কত অবজ্ঞাই না করিয়াছি। হে দয়াময় তুমি আমার এই সকল দোষ ক্ষমা কর।৪২ তুমি বিশ্বের পিতা। তুমি শ্রেষ্ঠ গুরু। তুমি সকলের পূজ্য। বিশ্ব-সংসারে তােমার তুলনা মিলে না ।৪৩ পিতা তাঁর পুত্রের, বন্ধু যেভাবে বন্ধুর এবং স্বামী যেমন স্ত্রীর দোষ ক্ষমা-করে, তুমিও ঠিক তেমনিভাবে আমাকে ক্ষমা করিও। ৪৪


এরূপ অপূর্ব বটে তবু ভয়ে মরি।

দয়া করে দেখা দাও পূর্বরূপ ধরি।।৪৫

বিশ্বরূপ ত্যজি প্রভু চতুর্ভুজ হও।

চতুর্ভুজ হয়ে পুনঃ দর্শন দাও ৷ ৷৪৬

শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন 

ওহে পার্থ তােমা প্রতি হইয়া সদয় ।

তেজোময় বিশ্বরূপ দেখানু তােমায়।।৪৭

সরলার্থঃ তােমার এই বিশ্বরূপ অপূর্ব। কিন্তু ইহা দেখিয়া আমার ভয় হইতেছে। তুমি দয়া করিয়া আমাকে তােমার পূর্বরূপ দেখাও।৪৫ হে প্রভু, তুমি বিশ্বরূপ ত্যাগ করিয়া চতুর্ভুজধারী হইয়া আবার দেখা দাও।৪৬ শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন- হে অর্জুন, তােমার প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াই আমি তােমাকে আমার দীপ্ত বিশ্বরূপ দেখাইলাম ।৪৭


বেদ যজ্ঞ তপঃ আদি লভি নানা জ্ঞান।

আর কেহ নাহি পায় ইহার সন্ধান।।৪৮

উগ্র রূপ দর্শনের ভয়-ভীতি হীন ।

প্রীতমনে পূর্ব রূপ কর দর্শন।।৪৯

সঞ্জয় কহিলেন 

এত বলি হে রাজন্ শ্রীকৃষ্ণ তখন।

সৌম্য রূপ ধরি পুনঃ অর্জুনে দেখান।।৫০

সরলার্থঃ বেদ, যজ্ঞ, তপস্যা প্রভৃতি নানাবিষয়ে জ্ঞান লাভ করিয়াও কেহ আমার সন্ধান পায় না।৪৮ আমার উগ্র রূপ দর্শন করিয়া তােমার যে ভয় হইয়াছে তাহা এখন দূর হইবে । তুমি এখন নির্ভয়ে আমার পূর্ব রূপ দর্শন কর। ৪৯. সঞ্জয় কহিলেন—হে মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র, এই কথা বলিয়া শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে নিজের পূর্ব রূপ দেখাইলেন ।৫০


অর্জুন কহিলেন

তােমার এ নব রূপ দেখে জনার্দন।

প্রকৃতিস্থ হইলাম সুপ্রসন্ন মন।।৫১

শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন

এ দুর্লভ রূপ মাের করিতে দর্শন।

বাঞ্ছা করে ওহে পার্থ সদা দেবগণ।।৫২

বেদ পাঠে যজ্ঞে দানে কিংবা তপস্যায় ।

আমার এ রূপ কেহ দেখিতে না পায়।।৫৩

সরলার্থঃ অর্জুন কহিলেন—হে কৃষ্ণ, তােমার এই নব রূপ দেখিয়া আমি প্রকৃতিস্থ হইলাম, আমার মন-প্রাণ প্রসন্ন হইল ।৫১ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন—হে অর্জুন, আমার এই দুর্লভ রূপ দেখিবার জন্য দেবগণ সর্বদাই ইচ্ছা করেন।৫২ যজ্ঞ, বেদপাঠ কিংবা দান করিয়া কেহই আমার এই দুর্লভ রূপ দর্শন করিতে পারে না ।৫৩


আমাতেই একনিষ্ঠ ভক্তি যার হয়।

দেখে রূপ পায় মােরে আমাতে সে রয়।।৫৪

মমভক্ত অনাসক্ত মমকর্মকারী।

পায় মােরে ওহে পার্থ সর্ব হিংসা ছাড়ি ৷ ৷৫৫

সরলার্থঃ আমাতে যাহার একনিষ্ঠ ভক্তি হয়—সেই ব্যক্তি আমার রূপ দেখিতে পারে। সেই ব্যক্তিই আমার প্রিয় ।৫৪ হে অর্জুন, আমার ভক্ত অনাসক্ত ভাবে হিংসা ছাড়িয়া আমার কর্ম করিয়াই আমাকে পাইয়া থাকে ।৫৫


শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার একাদশ অধ্যায়ের সার-সংক্ষেপ

একাদশ অধ্যায়ে বিশ্বরূপ দর্শন। অর্জুন এতদিন মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে দেখিয়াছিলেন এবং তাঁহাকে সাধারণ মানুষই মনে করিতেন । কিন্তু অর্জুন আজ অপরূপ দেখিলেন। শ্রীকৃষ্ণ সর্বব্যাপী অপূর্ব মূর্তি। তাঁহার অসংখ্য মুখ, অসংখ্য চক্ষু, অসংখ্য বাহু ও অসংখ্য চরণ। ত্রিলােক তাঁহার মধ্যে বিরাজমান। সহস্র সূর্যের তুল্য উজ্জ্বল তাহার রূপ। তিনি বিশ্বরূপ। দেবগণ, মহর্ষিগণ, সিদ্ধগণ সকলেই তাহার স্তব করিতেছেন। ভূতগণ তাঁহার মুখে প্রবেশ করিতেছে। তিনি ভীষ্ম দ্রোণাদি সকলকেই মারিয়া রাখিয়াছেন। দেখিয়া অর্জুন অত্যন্ত ভয়বিহ্বল। হইলেন। তিনি বিশ্বরূপের পরিবর্তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরূপই দেখিতে চাহিলেন।

ইতি বিশ্বরূপ দর্শনযােগ নামক একাদশ অধ্যায়


আরো পড়ুন:

মঙ্গলাচরণ প্রথম অধ্যায় | দ্বিতীয় অধ্যায় | তৃতীয় অধ্যায় | চতুর্থ অধ্যায় | পঞ্চম অধ্যায় | ষষ্ঠ অধ্যায় | সপ্তম অধ্যায় | অষ্টম অধ্যায় | নবম অধ্যায় | দশম অধ্যায় | দ্বাদশ অধ্যায় | ত্রয়োদশ অধ্যায় | চতুর্দশ অধ্যায় | পঞ্চদশ অধ্যায় | ষােড়শ অধ্যায় | সপ্তদশ অধ্যায় | অষ্টাদশ অধ্যায় | সংক্ষিপ্ত-মাহাত্ম্যম | সম্পূর্ণ-মাহাত্ম্যম | ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ