Chapter-12 বাংলায় শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার দ্বাদশ অধ্যায় | Twelfth Chapter of Srimad Bhagavad Gita in Bengali

Chapter-12 বাংলায় শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার দ্বাদশ অধ্যায় | Twelfth Chapter of Srimad Bhagavad Gita in Bengali


দ্বাদশ অধ্যায়


ভক্তিযােগ


অর্জুন কহিলেন

ভক্তিতে ভজে তােমা বা অব্যক্ত ব্রহ্মেরে।

এই দুই মধ্যে কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ বলি কারে।।১

শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন

আমাতে অর্পিত চিত্ত যােগযুক্ত যারা।

ভক্তিতে পূজয়ে মােরে যােগীশ্রেষ্ঠ তারা।।২

সরলার্থঃ অর্জুন বলিলেন- “হে কৃষ্ণ, ভক্তি দ্বারা তােমার ভজনা করা আর অব্যক্ত ব্রহ্মের ভজনা করা—এই দুইটির মধ্যে কোনটি অধিক শ্রেষ্ঠ? ১ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন- হে অর্জুন, যাঁহারা যােগযুক্ত তাঁহারা সর্বদা আমাতেই চিত্ত অর্পণ করেন। তাঁহারা ভক্তি দ্বারা আমার-পূজা করেন। তাঁহারাই যােগীশ্রেষ্ঠ।  ২


অব্যয় পরম-ব্রহ্ম সর্বব্যাপী রন ।

কুটস্থ অচল তিনি সংজ্ঞতীত হন।।৩ 

সর্বভূত-হিতে রত জিতেন্দ্রিয়গণ।

তাহারে পূজিয়া তারা আমাকেই পান। ৷৪

অব্যক্তের উপাসনা বহু ক্লেশময়।

তাহে ফল লভে নর দুঃখে অতিশয়।।৫

সর্বকর্ম সমর্পণ করিয়া আমারে।

মন-প্রাণ দিয়া পার্থ যারা ভজে মােরে।।৬

সরলার্থঃ পরমব্রহ্ম অব্যয় ও সর্বব্যাপী। তিনি কুটস্থ, অচল ও সংজ্ঞাতীত ৩ সর্বভূতহিতে রত জিতেন্দ্রিয় ব্যক্তিগণ সেই কূটস্থ ব্রহ্মের উপাসনা করিয়া আমাকেই লাভ করিয়া থাকেন। অব্যক্ত ব্রহ্মের উপাসনা খুবই কষ্টকর। মানুষ কষ্টে তাহাতে ফল লাভ করে। ৫ কেহ কেহ সর্বকর্ম আমাতে সমর্পণ করিয়া মন- প্রাণ দিয়া আমার ভজনা করেন। ৬


তারা সবে হয় মােতে নিবেদিত প্রাণ ।

সংসার-সাগর থেকে আমি করি ত্রাণ।।৭

আমাতে স্থাপন কর তব বুদ্ধি মন।

দেহান্তে পাইবে মােরে সত্য এ বচন।।৮

আমাতে স্থাপিতে মন যদি নাহি পার ।

অভ্যাসের বলে পার্থ সদা যত্ন কর।।৯

অভ্যাসে সমর্থ নৈলে মাের প্রীতি তরে।

মাের কর্ম কর তুমি কহিনু তােমারে।।১০

সরলার্থঃ তাঁহারা আমাতেই প্রাণ সমৰ্পণ করিয়া থাকেন। আমি তাঁহাদিগকে সংসার সাগর হইতে ত্রাণ করি। তুমি মন ও বুদ্ধি আমাতে স্থির কর। তাহা হইলে মৃত্যুর পর আমাকে পাইবে ।৮ হে অর্জুন, যদি আমাতে মন বুদ্ধি স্থির করিতে না- ই পার তবে অভ্যাসের দ্বারা চেষ্টা কর ।৯ যদি অভ্যাস করিতেও অসমর্থ হও তবে আমার প্রীতির জন্য আমার কাজ কর ।১০


ইহাতেও যদি তুমি অসমর্থ হও।

সর্বকর্মফল ত্যাজি পার্থ আমাযুক্ত রও।।১১

অভ্যাসের বড় জ্ঞান, জ্ঞানশ্রেষ্ঠ ধ্যান।

ধ্যানশ্রেষ্ঠ ফলত্যাগ, ত্যাগে শান্তি পান।।১২

সম দুঃখে-সুখে দয়া-মৈত্রী-ক্ষমাযুত।

অহং-মমত্ববিহীন বিদ্বেষ-রহিত ৷ ৷১৩

জিতেন্দ্রিয় সদা তুষ্ট সুদৃঢ় নিশ্চয়।

মন বুদ্ধি অর্পি মােরে প্রিয় ভক্ত হয়।।১৪

সরলার্থঃ হে অর্জুন, যদি তাহাও না পার তবে সর্বকর্মফল ত্যাগ করিয়া মদ্-যুক্ত হও।১১ অভ্যাস হইতে জ্ঞান বড়, জ্ঞান হইতে ধ্যান বড়, ধ্যান হইতে ফলত্যাগ বড় । ফলত্যাগ করিতে পারিলেই শান্তি পাওয়া যায় ।১২ আমার ভক্ত সুখে-দুঃখে সম, অহংকার ও মমত্বহীন এবং দয়া মৈত্রী ও ক্ষমাযুক্ত হইয়া থাকেন।১৩ আমার ভক্ত জিতেন্দ্রিয় দৃঢ় নিশ্চয় ও মন-বুদ্ধি আমাতে অর্পণ করিয়া সর্বদা সন্তুষ্ট থাকেন।১৪


উদ্বিগ্ন না করে কারে উদ্বিগ্ন না হয়।

হর্ষ-দ্বেষ ভয় মুক্ত ভক্ত মাের প্রিয় ।।১৫

নিরপেক্ষ সদাগুচি দক্ষ সর্বত্যাগী ।

সেই ভক্ত মাের প্রিয় নিঃস্পৃহ যে যােগী।।১৬

ইচ্ছা-দ্বেষ নাই যার নাহি শােক ভয়।

শুভাশুভ পরিত্যাগী ভক্ত প্রিয় হয়।।১৭

শীত-উষ্ণ সুখ-দুঃখ মান-অপমান।

শত্রু-মিত্রে সমভাব অনাসক্ত মন।।১৮

সরলার্থঃ যিনি অন্যকে উদ্বিগ্ন করেন না এবং নিজেও উদ্বিগ্ন হন না এবং হর্ষ-দ্বেষ ও ভয়মুক্ত । তিনিই আমার প্রিয় ভক্ত। ১৫ যে যােগী নিঃস্পৃহ, নিরপেক্ষ, সর্বদা পবিত্র, দক্ষ ও সর্বত্যাগী তিনিই আমার প্রিয় ভক্ত । ১৬ যাঁহার ইচ্ছা, দ্বেষ, শােক ও ভয় নাই এবং শুভ-অশুভ পরিত্যাগী সেই ভক্তই আমার প্রিয়। ১৭ আমার প্রিয় ভক্তের শীত-উষ্ণে , সুখ-দুঃখে, মান- অপমানে এবং শত্রু-মিত্রে সমান ভাব। তাঁহার মনে বিন্দুমাত্রও আসক্তি থাকে না। ১৮


স্তুতি-নিন্দা সমজ্ঞান স্বল্পভাষী যিনি ।

অল্পেতে সন্তুষ্ট, মৌনী, প্রিয় ভক্ত তিনি ৷ ৷১৯

যাহারা করয়ে হেন ধর্মামৃত পান।

শ্রদ্ধাযুক্ত অতি প্রিয় সেই ভক্তগণ।।২০

সরলার্থঃ আমার প্রিয় ভক্ত স্বল্পভাষী ও মৌনী। স্তুতি নিন্দায় তাঁহার সমজ্ঞান, তিনি অল্পে সন্তুষ্ট।১৯ যে সকল শ্রদ্ধাযুক্ত ভক্ত এই ধর্মামৃত পান করেন তাঁহারা আমার অতি প্রিয় ২০


শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের সার-সংক্ষেপ

দ্বাদশ অধ্যায়ে সাকার উপাসনা বা ভক্তিযােগ সম্বন্ধে বলা হইয়াছে। অব্যক্ত ব্রহ্মের চিন্তাদ্বারা ভগবানকে পাওয়া যায় । তবে ইহা সহজ নয়। সহজ হইতেছে ভক্তিযােগ বা সাকার উপাসনা। ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরে মন স্থির করা। মন চঞ্চল; অতএব ঈশ্বরে মন স্থির করা সহজ নয়। অভ্যাসের দ্বারা চঞ্চল মনকে বার বার বিষয় হইতে দূরে রাখিতে চেষ্টা করা। তাহা না পারিলে সদগ্রন্থাদি পাঠ, নাম কীর্তন, পূজার্চনা ইত্যাদি দ্বারা মন স্থির কর। তাহাও না পারিলে কর্মফলের আকাক্ষা ত্যাগ করিয়া ঈশ্বরের প্রীতির জন্য কর্ম করিলে মন স্থির হয়। কারণ, ত্যাগ হইতে মন স্থির হয়, শান্তি আসে। ইহাই ভক্তিযােগ ।

ইতি ভক্তিযােগ নামক দ্বাদশ অধ্যায়।


আরো পড়ুন:

মঙ্গলাচরণ প্রথম অধ্যায় | দ্বিতীয় অধ্যায় | তৃতীয় অধ্যায় | চতুর্থ অধ্যায় | পঞ্চম অধ্যায় | ষষ্ঠ অধ্যায় | সপ্তম অধ্যায় | অষ্টম অধ্যায় | নবম অধ্যায় | দশম অধ্যায় | একাদশ অধ্যায় | ত্রয়োদশ অধ্যায় | চতুর্দশ অধ্যায় | পঞ্চদশ অধ্যায় | ষােড়শ অধ্যায় | সপ্তদশ অধ্যায় | অষ্টাদশ অধ্যায় | সংক্ষিপ্ত-মাহাত্ম্যম | সম্পূর্ণ-মাহাত্ম্যম | ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ