ষষ্ঠ অধ্যায়
অভ্যাসযােগ
শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন
কর্ম না করিলে কেহ ত্যাগী নাহি হয়।
ফলত্যাগী যেই জন তারে ত্যাগী কয়।।১
সন্ন্যাস ও কর্মযােগ দুই-ই এক হয় ।
কামনা থাকিলে কেহ যােগী কভু নয় ৷ ৷২
যােগ ইচ্ছু জন করে কর্মকে ধারণ।
যােগারূঢ় জন করে কর্মেরে বর্জন ৷ ৷৩
সরলার্থঃ শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন, কর্ম না করিলে কেউ ত্যাগী হইতে পারে না। যে ব্যক্তি, ফলত্যাগী তিনিই সত্যিকার ত্যাগী। ১ সন্ন্যাস ও কর্মযােগ—দুই-ই এক। কামনা থাকা পর্যন্ত কেহই কখনও যােগী হইতে পারে না। ২ যে ব্যক্তি যােগ লাভ করিতে চান তিনি কর্মকে ধারণ করিয়া থাকেন। আর যিনি যােগারূঢ় তিনি কর্ম ত্যাগ করেন। ৩
ভােগেতে নাহিক তৃষ্ণা কর্মেতে বন্ধন।
অনাসক্ত থাকে সদা যােগারূঢ় জন।।৪
অবসাদ ছাড়ি সদা আত্মা উদ্ধারিবে।
আত্মাই আত্মার বন্ধু শত্রুও জানিবে।।৫
আত্মজয়ী যােগী যেই আত্মা বন্ধু তার।
আত্ম শক্রবৎ, নাই আত্মজ্ঞান যার।।৬
শীত তাপ সুখ দুঃখ মান অপমানে।
প্রশান্ত সংযমী থাকে সমাহিত মনে।।৭
সরলার্থঃ যিনি যােগারূঢ় তাঁহার ভােগে আসক্তি ও কর্মের বন্ধন কিছুই থাকে না। তিনি সর্বদা সর্ব বিষয়ে অনাসক্ত থাকেন। ৪ যােগারূঢ় ব্যক্তি আত্মা দ্বারা আত্মার উদ্ধার করিবেন। তিনি কখনও আত্মাকে অবনতি প্রাপ্ত হইতে দিবেন না। আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু।৫ যে যােগী পুরুষ আত্মজয়ী, আত্মা তাঁহার বন্ধু। আর যাহার আত্মজ্ঞান নাই, আত্মা তাহার শত্রু। ৬ যােগী-পুরুষ সর্বদাই উদার এবং সংযমী। সুখ-দুঃখ, শীত-তাপ ও মান অপমানে তিনি কখনও বিচলিত হন না। ৭
জ্ঞান বিজ্ঞানেতে যদি পরিতৃপ্ত মন।
স্বর্ণে লােষ্ট্রে সমজ্ঞান সেই যােগী জন।। ৮
পাপ-পুণ্যে শত্রু-মিত্রে সদা দ্বেষহীন।
সর্বজীবে সমবুদ্ধি তিনি শ্রেষ্ঠ জন ।।৯
স্পৃহাশূন্য জিতচিত্ত পরিগ্রহহীন।
একাকী নির্জনে রহে সেই যােগীজন।।১০
নাতি উচ্চ নাতি নীচ পরিশুদ্ধ স্থানে।
কুশাসনে বসে যােগী স্থিরচিত্ত মনে।।১১
সরলার্থঃ যােগী ব্যক্তির মন জ্ঞান বিজ্ঞানে পরিতৃপ্ত থাকে। তাই তিনি স্বর্ণ ও লােষ্ট্রকে সমজ্ঞান করেন । ৮ পাপ-পুণ্য, শত্রু-মিত্রে এবং সর্বজীবে যাঁহার সমবুদ্ধি এবং যিনি দ্বেষহীন, তিনিই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।৯ যােগী ব্যক্তি নিঃস্পৃহ, জিতেন্দ্রিয় ও পরিগ্রহবিমুখ । তিনি সর্বদা নির্জনে বাস করেন। ১০ যােগী ব্যক্তি স্থির মনে সমতল স্থানে কুশাসনে উপবেশন করেন। ১১
যােগাসনে বসি যােগী যােগ অভ্যাসিবে।
একাগ্র সংযতচিত্ত আত্মশুদ্ধি হবে ৷ ৷১২
অচঞ্চল রবে দেহ আর গ্রীবাশির।
সতত রাখিবে দৃষ্টি অগ্রে নাসিকার।।১৩
স্থিরচিত্তে শান্তভাবে ব্রহ্মচারী রবে।
আমা পরায়ণ হয়ে নির্ভয়ে থাকিবে ৷ ৷১৪
এভাবে যে করি যােগ চিত্ত জয় করে।
লভে সে নির্বাণ শান্তি আমার ভিতরে ৷ ৷১৫
সরলার্থঃ যােগী ব্যক্তি কুশাসনে বসিয়া সংযতচিত্তে যােগাভ্যাস করেন। তাহাতেই তাঁহার আত্মশুদ্ধি হইয়া থাকে। ১২ যােগাভ্যাসকালে তাঁহার দেহ অচঞ্চল, ঘাড় ও মাথা স্থির থাকিবে। তাঁহার দৃষ্টি নাসিকার অগ্রে স্থির থাকিবে।১৩ যােগী ব্যক্তি সর্বদা স্থিরচিত্ত, শান্ত ও ব্রহ্মচারী হইবেন। তিনি নির্ভয়ে আমাতে আত্মনির্ভর করিয়া থাকিবেন। ১৪ এইভাবে যােগ সাধন করিয়া যিনি চিত্ত জয় করেন, তিনি আমার মধ্যেই নির্বাণ ও শান্তির লাভ করেন। ১৫
অত্যাহার অনাহার অতি নিদ্রা যায় ।
অতি জাগরণেতেও যােগ নাহি তার।।১৬
নিয়মিত ভােগাহার কর্ম চেষ্টা যার।
মিত নিদ্রা জাগরণে যােগ হয় তার।।১৭
আত্ম-সমাহিত চিত্ত সংযত যে জন ।
সর্বকর্মে স্পৃহাশূন্য যুক্ত তিনি রন ।।১৮
শান্ত বায়ু স্থানে দীপ নিথর যেমন ।
আত্মযুক্ত যােগীচিত্ত সুস্থির তেমন।।১৯
সরলার্থঃ অতি আহার, অনাহার, অতিনিদ্রা বা অতি জাগরণ-কোনটিতেই যােগ সাধনা হয় না । ১৬ যিনি নিয়মিত ভােগী, নিয়মিত আহারী, নিয়মিত কর্মী, নিয়মিত চেষ্টাশীল এবং যাঁহার নিদ্রা ও জাগরণ নিয়মিত তাঁহারই যােগ সাধনা হইয়া থাকে । ১৭ যিনি সংযত, আত্মসমাহিত চিত্ত এবং সর্ব কর্মে স্পৃহাশূন্য তাঁহারই যােগ সাধনা হইয়া থাকে। ১৮ যে স্থানে শান্ত বায়ু সেখানে যেমন প্রদীপ শান্ত থাকে, আত্মাযুক্ত যােগীও সেইরূপ সর্বদা সুস্থির থাকেন । ১৯
উপরতি লভে যােগে রুদ্ধচিত্ত জন।
আত্মদর্শনে যার অবিচল মন।।২০
বাক্যাতীত অতীন্দ্রিয় সুখ উপজয়।
সে অপূর্ব অবস্থাতে অবিচল রয়।।২১
যাহা পেয়ে অন্য লাভ তুচ্ছ বােধ হয়।
অতিশয় দুঃখেতেও বিচলিত নয়।।২২
সুখ দুঃখ স্পর্শ শূন্য সেই যােগ হয়।
সর্বদা করিবে তুমি যােগের আশ্রয়।।২৩
সরলার্থঃ যােগযুক্ত ব্যক্তি চিত্তরােধ করিয়া এবং শান্ত মনে আত্মদর্শন করিয়া আনন্দ লাভ করেন। ২০ আত্মদর্শন হইলে যােগীর মনস্থির হয় এবং সেই অপূর্ব অবস্থায় বাক্যাতীত ও অতীন্দ্রিয় সুখ লাভ হইয়া থাকে। এই সুখ লাভ করিলে অন্য সকল সুখই তুচ্ছ বােধ হয় তখন অতিশয় দুঃখেও মন বিচলিত হয় না। ২২ হে অর্জুন, যেই যােগে সুখ দুঃখের শেষ মাত্র নাই, তুমি সেই যােগ অভ্যাস করিবে। ২৩
ত্যজিবে কামনা সব সংকল্প সঞ্জাত।
নিঃশেষে ইন্দ্রিয়গ্রামে করিবে সংযত ৷ ৷২৪
স্থির বুদ্ধি দিয়া ধৈর্য ধীরে ধীরে ধর।
চিন্তাহীন হয়ে মন আত্মসংস্থ কর।।২৫
চঞ্চল অস্থির মন যে যে দিকে ধায়।
তথা তথা হতে টান আত্মবলে তায়।।২৬
রজোগুণহীন যিনি প্রশান্ত অন্তর।
সমাধিজনিত সুখ লভে যােগীবর।।২৭
সরলার্থঃ তুমি সমস্ত রকম কামনা ত্যাগ করিবে এবং ইন্দ্রিয়গণকে সংযত করিবে। ২৪ বুদ্ধি স্থির করিয়া ধৈর্য ধারণ কর এবং চিন্তাশূন্য হইয়া মন সংযত কর। ২৫ মন চঞ্চল । সে নানা দিকে ধাবিত হয়। তাহাকে টানিয়া নিজের বশে আনিতে চেষ্টা কর। ২৬ সেই যােগী রজোগুণহীন এবং যাঁহার অন্তর প্রশান্ত, তিনিই সমাধিজনিত সুখ লাভ করিয়া থাকেন। ২৭
নিষ্পাপ সে যােগী যুক্ত হইয়া এভাব।
ব্রহ্মানন্দে অনায়াসে করে সুখ লাভ।।২৮
যােগযুক্ত সর্বত্রই সমদর্শী হয়।
সর্বভূতে দেখে আত্মা জীব আত্মময়।।২৯
আমারে সবেতে দেখে আমাতে সবারে ।
সেও আমি কখনও হারাই না তারে।।৩০
সর্বভূতে আছি আমি-তা জানি যে ভজে।
যেভাবেই থাকুক সে আমাতে বিরাজে।।৩১
সরলার্থঃ নিষ্পাপ যােগী এইভাবে ব্রহ্মানন্দ প্রাপ্ত হইয়া অনায়াসে সুখ লাভ করেন। ২৮ যোগযুক্ত ব্যক্তি সর্বত্রই সমদর্শী হন। তিনি সর্বভূতে আত্মাকে এবং আত্মাতে সর্বভূত দেখিতে পান। ২৯ যে যােগী সকলের মধ্যে আমাকে এবং আমার মধ্যে সকলকে দেখেন, আমি কখনও তাঁহাকে হারাই-না, সেই ব্যক্তি কখনও আমাকে হারান-না। ৩০ আমি সর্বভূতে বিরাজ-করি—ইহা জানিয়া যে ব্যক্তি আমার ভজনা করে, সে ব্যক্তি যেভাবেই থাকুক না কেন, তিনি আমার মধ্যেই বিরাজ-করেন। ৩১
সুখে দুঃখে সর্বজীবে সমদর্শী যিনি।
যােগীশ্রেষ্ঠ সেইজন জানিও ফাল্গুনি।।৩২
অর্জুন কহিলেন
যেই সাম্যযােগ কৃষ্ণ কহিলে আমায়।
চঞ্চল আমার মনে স্থায়ী নাহি রয়।।৩৩
দুর্জয় চঞ্চল কৃষ্ণ আমার এ মন।
বাতাসের মত তারে দমানাে কঠিন।।৩৪
শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন
অস্থির চঞ্চল বীর এ মন দুর্জয়।
অভ্যাস বৈরাগ্য বলে বশীভূূত হয়।।৩৫
সরলার্থঃ হে অর্জুন, যিনি সুখে দুঃখে সর্বজীবে সমদর্শী তিনিই যোগীশ্রেষ্ঠ। ৩২ অর্জুন বলিলেন—যে যােগের কথা তুমি আমাকে এখন বলিলে আমার চঞ্চল মনে তাহা স্থায়ী হইতেছে না। হে কৃষ্ণ, আমার এই-মন বড়ই চঞ্চল। বাতাসের মতই এই মনকে দমানাে বড়ই কঠিন। ৩৪ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন—হে অর্জুন এই দুর্জয়-চঞ্চল মনকে বৈরাগ্য এবং অভ্যাসের দ্বারা বশে আনিতে হয়। ৩৫
অসংযত চিত্তে যোগ সহজে না হয়।
সংযত জনের তাহা সুকঠিন নয়।।৩৬
অর্জুন কহিলেন
প্রথমে শ্রদ্ধায় যার যােগে হয় মতি।
যোগভ্রষ্ট হলে পরে কিবা তার গতি।।৩৭
জ্ঞান আর কর্ম পথে হইলে পতন।
ছিন্ন মেঘ সম নষ্ট হবে কি সেজন।।৩৮
কৃপা করি কর দূর মাের এ সংশয়।
আর কে করিবে দূর ওহে দয়াময়।।৩৯
সরলার্থঃ অসংযত ব্যক্তির পক্ষে মনকে বশে আনা কঠিন কিন্তু সংযমী ব্যক্তির পক্ষে মনকে জয় করা কঠিন নয়।৩৬ অর্জুন বলিলেন-যােগারূঢ় ব্যক্তি যদি যোগভ্রষ্ট হন তবে তাঁহার গতি কি হয়? ৩৭ যােগারূঢ় ব্যক্তি যদি জ্ঞানের পথ ও কর্মের পথ হইতে ভ্রষ্ট হন, তাহা হইলে তিনি কি ছিন্ন মেঘের মত নষ্ট হইবেন?৩৮ হে কৃষ্ণ, তুমি দয়া করিয়া আমার এই সন্দেহ দূর কর। হে দয়াময় তুমি ছাড়া আর কে এই সন্দেহ দূর করিবে। ৩৯
শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন
সর্বদা যে জন পার্থ শুভ কাজে ব্রতী।
ইহ পরলােকে তার না হয় দুর্গতি ৷ ৷৪০
বহুবর্ষ পুণ্য-লােকে করি অবস্থান।
যােগভ্রষ্ট লভে জন্ম ধনীর ভবন।।৪১
অথবা পুণ্যের বলে জ্ঞান-যােগী ঘরে।
সে জন লভয়ে জন্ম এ ভব সংসারে।।৪২
পূর্বজন্মজাত জ্ঞান লভে সেই জন।
চেষ্টা করে পুনরায় মুক্তির কারণ।।৪৩
সরলার্থঃ শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন— হে অর্জুন, যে ব্যক্তি শুভকাজে রত হয় তাহার ইহলােকে এবং পরলােকে দুর্গতি হয় না। ৪০ যােগভ্রষ্ট ব্যক্তি মৃত্যুর পর বহু বৎসর পুণ্যলােকে বাস করিয়া পরজন্মে ধনীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ৪১ অথবা সেই যােগভ্রষ্ট ব্যক্তি পুণ্যবলে জ্ঞানযােগীর ঘরেও জন্মগ্রহণ করিয়া থাকে। ৪২ সেই ব্যক্তি পূর্বজন্মের জ্ঞানের বলে পুনরায় মুক্তির জন্য চেষ্টা করে। ৪৩
অভ্যাসের ফলে সেই যােগনিষ্ঠ হয়।
বিষয় হইতে পুনঃ দূরে চলে যায়।।৪৪
বহুজন্ম সাধনায় পাপমুক্ত হয়।
সাধনায় সিদ্ধ হয় মােক্ষপদ পায়।।৪৫
তপস্বী ও জ্ঞানী-কর্মী শ্রেষ্ঠ হন যােগী ।
অতএব হও পার্থ যােগ অনুরাগী।।৪৬
আমাগত চিত্ত হয়ে মাের সেবা করে।
শ্রেষ্ঠ যােগী বলে আমি গণি যে তাহারে।।৪৭
সরলার্থঃ সেই ব্যক্তি অভ্যাসের দ্বারা আবার যােগনিষ্ঠ হয় এবং বিষয় হইতে দূরে থাকে। ৪৪ এভাবে বহুজন্ম সাধনা করিয়া তিনি পাপমুক্ত হইয়া সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতঃ মােক্ষপ্রাপ্ত হন। ৪৫ হে অর্জুন যােগী ব্যক্তি, মুনি জ্ঞানী ও কর্মী অপেক্ষা বড় । অতএব তুমি যােগ অবলম্বন কর। ৪৬ যে মদ্-গতচিত্ত হইয়া আমার সেবা করে আমি তাহাকে শ্রেষ্ঠ যােগী বলিয়া মনে করি। ৪৭
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ের সার-সংক্ষেপ
ষষ্ঠ অধ্যায়ে অভ্যাস-যােগ। ইহা কর্মযোগেরই অঙ্গস্বরূপ। কর্ম ত্যাগ করিলেই সন্ন্যাসী বা যােগী হওয়া যায় না। সন্ন্যাসী বা যােগী হইতে হইলে সর্বসঙ্কল্প ত্যাগ করিয়া কর্ম করিতে হইবে। যিনি কামনা ত্যাগ করিয়া কর্ম করেন, সন্ন্যাসী এবং যােগী দুই-ই তিনি । নিষ্কাম কর্মই যােগসিদ্ধির কারণ। যােগ অভ্যাসের জন্য প্রয়ােজন নির্জন স্থানের । নির্জন পবিত্র স্থানে আসনে বসিয়া সংযমের দ্বারা মন স্থির করিয়া যােগাভ্যাস করিতে হয় আত্মশুদ্ধির জন্য। সমস্ত কামনা দূর করিতে পারিলেই মন সংযত ও ইন্দ্রিয় দমিত হয়। সংযত মনকে অন্তর্মুখী করিতে পারিলেই ক্রমে ক্রমে চিত্তবৃত্তি নিরােধ হয়। চিত্তবৃত্তি নিরােধ হইলে কোন বিষয়েই চিন্তা থাকে না। তখন আত্মসংস্থ হওয়া যায়। আত্মসংস্থ হইলে নিজের স্বরূপ প্রতিভাত হয়। নিজের স্বরূপ প্রতিভাত হইলে পরম শান্তি অনুভূত হয়। যােগী ব্যক্তি তখন মহাদুঃখেও বিচলিত হন না। সেই ব্যক্তি সর্বত্র সমদর্শন লাভ করেন—তিনি আত্মাকে সর্বভূতে এবং সর্বভূতকে আত্মাতে দর্শন করেন। ইহাই হল আত্মদর্শন!
আত্মদর্শনই যােগের উদ্দেশ্য। আত্মদর্শনকারী যােগী শ্রেষ্ঠ ভক্ত। তিনি সারা বিশ্বে ভগবানকে নারায়ণরূপেই দেখিয়া থাকেন। তাই তিনি নারায়ণজ্ঞানেই সকলকে দেখিয়া থাকেন ও সকলের সেবা করিয়া থাকেন। মনকে সংযত করিতে না পারিলে যােগ সাধনা হয় না। মন বাতাসের মতই চঞ্চল। অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে সংযত করিতে হয় । যােগভ্রষ্ট ব্যক্তি কখনও দুর্গতি প্রাপ্ত হন না। পরজন্মে তিনি ধনীর ঘরে বা জ্ঞানীর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। পূর্ব জন্মের জ্ঞানের বলে যােগে আকৃষ্ট হন। বহুজন্মের চেষ্টায় যােগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করিয়া তিনি পরমগতি প্রাপ্ত হন। এই হিসাবে মুনি, কর্মী, সন্ন্যাসী সকলের অপেক্ষা যােগী শ্রেষ্ঠ । তিনি নিষ্কাম কর্মী, আত্মজ্ঞানী এবং পরমভক্তও বটেন।
ইতি অভ্যাসযােগনামক ষষ্ঠ অধ্যায়।
আরো পড়ুন:
মঙ্গলাচরণ | প্রথম অধ্যায় | দ্বিতীয় অধ্যায় | তৃতীয় অধ্যায় | চতুর্থ অধ্যায় | পঞ্চম অধ্যায় | সপ্তম অধ্যায় | অষ্টম অধ্যায় | নবম অধ্যায় | দশম অধ্যায় | একাদশ অধ্যায় | দ্বাদশ অধ্যায় | ত্রয়োদশ অধ্যায় | চতুর্দশ অধ্যায় | পঞ্চদশ অধ্যায় | ষােড়শ অধ্যায় | সপ্তদশ অধ্যায় | অষ্টাদশ অধ্যায় | সংক্ষিপ্ত-মাহাত্ম্যম | সম্পূর্ণ-মাহাত্ম্যম | ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র।
0 মন্তব্যসমূহ